আমার বান্ধবী এমা। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার। চমৎকার হাসিখুশি মেয়ে। আজ ওর মেজাজ বেশ ফুরফুরে। বিষয়টা খুব স্বাভাবিক হবার কথা হলেও আসলে স্বাভাবিক না। দুমাস হলো ব্রেকাপ করেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে। বেশ বিধ্বস্ত ছিল বলে দুটা উইকেন্ডে ড্রিঙ্ক করেছে প্রচুর, সে খবর আমি ভালো করেই জানি। তাই আজকে জিগ্যেস করলাম, তোমার মন ভাল হবার রহস্য কী? হাসি মুখে জবাব দিল, নতুন বয়ফ্রেন্ড হয়েছে। বিষয়টা অবশ্যই আনন্দের। ভালো খবর জেনে অভিনন্দন জানালাম।বললাম, এবারের ছেলেটা কেমন? ও উত্তর দিল মানুষ হিসেবে চমৎকার। হাসিখুশি এবং সবচেয়ে বড় বিষয় he is good in bed।
আমি ওর শেষ কথাটা শুনে ভাবতে বসলাম, ৩৪ বছরের এই মেয়েটা অকপটে একটা সত্যি কথা বলে দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে জন্মালে এর কপালে এতক্ষণে হাজার খানেক গালি জুটে যেত।
আমার এক স্কুলের বান্ধবী একবার বলছিল ওর শ্বশুর বাড়িতে মহা সমস্যা। কারণ বিয়ের ছয় বছর পরে ওদের কোন বাচ্চা নেই। জিজ্ঞাসা করলাম, বিষয়টা কী? ও বলে, ছয়মাসেও একবার সেক্স না হলে, বাচ্চা কি আকাশ থেকে আসবে?
বললাম জামাইকে ডাক্তার দেখা, ও বলে, দোস্ত, এই কাজ করা যাবে না। জানাজানি হলে ইজ্জত থাকবে না।
আমি ভাবছিলাম সামান্য সর্দিকাশি হলেও ডাক্তার দেখানো যায়, অথচ যৌনতা তো মৌলিক অধিকার মানুষের। সেটার জন্য ডাক্তার দেখালে ইজ্জত কেন চলে যাবে?
সেক্স তো শুধু বাচ্চার জন্য না, একটা শারীরিক চাহিদা। এখন যদি কেউ বলে তার চাহিদা নাই, তার মানে সে অসুস্থ, তার চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন।
যাই হোক, আমার সেই বান্ধবী নিজে কেমন আছে সেটা আর নাই বা বললাম।
যৌনতার মতো একটা স্বাভাবিক চাহিদাকে ট্যাবু করে রাখা হয়েছে বলে বাঙালী মেয়েরা যৌনতা নিয়ে কথা বলতে ভয় পায়। তারা যৌনতা উপভোগ করতে ভয় পায়। মাথায় অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে চুপ করে থাকে। ইচ্ছাগুলো চেপে রাখে পাছে সমাজ তাকে মন্দ মেয়ে বলে সেই ভয়ে । তারা যৌনতা নিয়ে কথা বলাকেও অসম্মানের ভাবে। ভাবে খারাপ মেয়ের উপাধি কপালে জুটবে। এই কারণে লিস্টনের ফ্ল্যাটের গল্প হয় লীনার ফ্ল্যাটের কোনো গল্প হয় না। অথচ লীনার ইচ্ছাও আছে, তার ফ্ল্যাটও যে আছে, সেটা খুব সত্যি বিষয়।
‘লাভ ইউ জিন্দেগী’ সিনেমার একটা ডায়লোগ মনে পড়ে গেল, আমরা একটা চেয়ার কিনতে গেলে দেখে শুনে, অনেকগুলো চেয়ারে বসে যাচাই করি কোনটা বসার জন্য উপযুক্ত। চেয়ারটা আরামের হবে কিনা সেটা যাচাই করেই তবে কেনার সিদ্ধান্ত নেই। যে মানুষটার সঙ্গে আজীবন কাটাতে চাই, তার বেলায় কেন দেখে বুঝে বেছে নেবো না? সেখানেও তো সেই আরামের প্রশ্ন।
বিয়ে শুধু সন্তানের দায় ভার নেবার জন্য কিংবা দুজন মানুষ তাদের জীবন ভাগ করে নেবার এগ্রিমেন্ট না। যৌনতা উপভোগ করাটাও সেখানে মুখ্য। আর যৌনতা অবশ্যই ভালবাসা প্রকাশের সবচেয়ে চমৎকার উপায়। যে দম্পতির যৌন জীবন স্বাভাবিক এবং উপভোগ্য, তারা আসলে সুখী দম্পতি।
কোন আপু যদি বলে , আমি তাকে ভালবাসি তাই যৌনতা আমার কাছে মুখ্য না, আপু আপনি ডাক্তার দেখান প্লিজ । আর আপনার স্বামী কিংবা সঙ্গী যদি আপনাকে ভালোবাসে তাহলে তাকে বলেন চক্ষুলজ্জা বাদ দিয়ে ডাক্তার দেখাতে।
ভাত খাওয়া স্বাভাবিক হলে যৌনতাও স্বাভাবিক। যে বিছানায় ভালো না, তাকে নিয়ে কেউ আজীবন কাটাতে চাইলে সেটা তার ইচ্ছা, কিন্তু কথা হলো পুরুষ মানুষ কিন্তু বৌ মরে গেলে একা থাকে না, বৌ থাকা অবস্থায় তাদের অন্য নারীর সাথেও সম্পর্ক থাকে, তাহলে তুমি নারী বলে কেন লাশ হয়ে জীবন পার করে দেবে? যে বিছানায় ভালো না এবং যে ভালো হতেও চায় না, উল্টা নিজের অক্ষমতা বৌ এর উপড়ে চাপায়, তাকে ত্যাগ করার মানসিকতা গড়ে ওঠা জরুরি।